ঢাকা,শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

আমি ন্যায় বিচার পেয়েছি, যথা সম্ভব দ্রুত দেশে ফিরতে চাই : সালাহউদ্দিন

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া-পেকুয়া ::   ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সিলং এর নিন্ম আদালতে বেকসুর খালাস পেয়েছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার স্ত্রী সাবেক এমপি হাসিনা আহমেদ। ভারতে অনুপ্রবেশের দায়ে সালাহউদ্দিনের বিরুদ্ধে শিলং পুলিশের দায়ের করা মামলায় ৩ বছর আইনী প্রক্রিয়ার পর আজ ২৬ অক্টোবর এ রায় ঘোষণা হয়। ইতিমধ্যে তার মামলার রায় ৪ বার পিছিয়েছিল বলে জানিয়েছেন তার স্বজনরা। বৈধ কাগজপত্র ছাড়া ভারতে অনুপ্রবেশের দায়ে ফরেসার্ন এক্টের ১৪ ধারায় ২০১৫ সালে তার বিরুদ্ধে ভারতের আদালতে মামলাটি দায়ের করে সিলং পুলিশ। আজ সালাহউদ্দিন আহমদের আইনজীবি এসপি মহন্তের সাথে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সিবিএনকে জানান, শুত্রুবার নিন্ম আদালতের বিচারক ডিজি খারশিং সালাহউদ্দিন আহমদকে খালাসের আদেশ দেন। রায় ঘোষণার সময় সরকারী কৌশলী রাজিব নাথও উপস্থিত ছিলেন বলে জানান তিনি। তিনি জানান, আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, “হি হেজ বিন ইন্নোসেন্ট”। একইভাবে তাকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে বাংলাদেশের আইন-শৃংখলা বাহিনীর হাতে হস্তান্তর করতে ব্যবস্থা নিতে বিএসএফকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। গত ১৩ আগষ্ট থেকে বারবার তারিখ পিছিয়ে সর্বশেষ শুত্রুবার আদালতের সিদ্ধান্ত জানানো হয়। আজ সালাহউদ্দিন আহমদ টেলিফোনে সিবিএনকে জানান, “আমি ন্যায় বিচার পেয়েছি। যথা সম্ভব দ্রুত দেশে ফিরতে চাই।”

সিলং এর সালাহউদ্দিন আহমদের সাথে থানা সাংবাদিক নুরুল ইসলাম হেলালী জানান, “আজ দুপুর ২ টার দিকে আদালতে প্রবেশ করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। রায় ঘোষণা হয় আড়াইটার দিকে। রায় ঘোষণার পর সালাহউদ্দিন আহমদকে আনন্দিত দেখা যায়। তার শারিরীক অবস্থা ভাল বলে জানান তিনি।”

এদিকে সালাহউদ্দিনের রায়ের খবরে তার জন্মভূমি পেকুয়ার হাজার হাজার মানুষ ও বিএনপি নেতা-কর্মীরা আনন্দ মিছিল করতে পেকুয়া বাজার দলীয় কার্যালয়ে একত্রিত হলে পুলিশের বাঁধায় মিছিল করতে পারেনি তারা। তবে নেতা-কর্মীরা নিজেদের মাঝে মিষ্টি বিতরণ করতে দেখা যায়।

জানাযায়, ২০১৫ সালে সরকারী বিরোধী আন্দোলনে বিএনপির মূখপাত্র হিসেবে আত্মগোপনে থেকে মিডিয়ায় ভিডিও বার্তা পাঠিয়ে আলোচনায় আসেন। ওই বছরের ১০ মার্চ ঢাকার উত্তরার একটি পরিত্যক্ত বাসা থেকে আইনশৃংখলা বাহিনী পরিচয়ে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরদিন তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদ তার স্বামীকে আইনশৃংখলা বাহিনী পরিচয়ে তার স্বামীকে তুলে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেন। পরে ৬২ দিন পর ১২মে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং গলফ লিঙ্ক মাঠের পাশে অসুস্থ অবস্থায় সালাহউদ্দিনের সন্ধান পাওয়া যায়। সালাহউদ্দিন আহমদের স্বজনদের সাথে কথা বলে জানাযায়, ১২ মে ভোরে শিলং এর গলফ লিঙ্ক মাঠের পাশে অসুস্থ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে সেখানকার লোকজন পুলিশকে খবর দিলে শিলং পুলিশ তাকে তুলে নিয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সালাহউদ্দিন নিজেকে ‘বাংলাদেশের সাবেক মন্ত্রী’ পরিচয় দেয়ায় তাদের সন্দেহ হয়। পরে তাকে সেখানকার মানসিক হাসপাতাল ‘মিমহানস হসপিটালে’ ভর্তি করায় পুলিশ। এর ১দিন পর ১২ মে বাংলাদেশের মিডিয়ায় তার সন্ধানের বিষয়টি জানাজানি হলে তাকে মিমহানস থেকে সরিয়ে ‘সিভিল হসপিটালে’ পুলিশ হেফাজতে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সালাহউদ্দিনের শারিরীক অবস্থার অবনতি হলে তাকে শিলং এর বিশেষায়িত হাসপাতাল নিগ্রিমস এ চিকিৎসা দেয়া হয়। এসময় তার বিরুদ্ধে কাগজপত্রবিহীন অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে ফরেনার্স এ্যাক্ট এ মামলা করে শিলং পুলিশ। গত সাড়ে ৩ বছর ধরে সে মামলায় আইনী লড়াই করতে সালাহউদ্দিন আহমদ শিলং শহরের বিষ্ণপুর এলাকার সানরাইজ গেষ্ট হাউস নামের একটি ডুপ্লেক্স বাড়ীতেই থেকেছেন। দেশে থাকা অবস্থায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব থাকলেও শিলং থাকা অবস্থায় তার জায়গা হয় বিএনপির সর্ব্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটিতে।

পাঠকের মতামত: